“ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এ উক্তিটি আজ থেকে অনেক বছর আগেই রচিত হয়েছিলো। কবি বুঝেছিলেন, পৃথিবীতে মহান কোন কিছু সৃষ্টি করতে হলে নারীর ভুমিকা কতখানি। কিন্তু অদ্ভুত আমদের সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থা।
সে সময়ের কথা কি বা বলবো, এখনই যে অবস্থা! নারীদের দ্বারা কোন কিছু সৃষ্টি তো দূরে থাক, সৃষ্টির ভাবনাটা তাদের মধ্যে আসাটাই ছিল অন্যায়। আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যাবস্থায়, সমাজে শুধুমাত্র নিজাদের সেরা হিসেবে উপস্থাপন করাটাই ছিল আমাদের পুরুষদের কাজ, তা সে নারীর ঘাড়ে ভর দিয়ে হলেও।
আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই কোন না কোন নারী রয়েছে, তা হতে পারে মা, বোন কিম্বা নিজের স্ত্রী। আমরা কজনই বা তাদের কথা চিন্তা করি? প্রিয় পাঠক প্রশ্ন টা আপনাদের সকলের কাছেই রইল। এখানে আলোচনা মূলত এ নারীদের নিয়েই।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উদ্দেশ্য হ’ল নারীরা যেসব সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির মুখোমুখি প্রতনিয়ত হন সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তারা প্রতিনিয়ত যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সে সব বিষয়ে আলচনা করা এবং সমস্ত ক্ষেত্রের নারীদের অগ্রগতির পক্ষে সমর্থন করা।
উদ্দেশ্যমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির যে সীমাহীন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেটা, এগিয়ে নিয়ে যেতে সমাজের প্রতিটা নারী যাতে পুরুষের পাশে থেকে সমান তালে কাজ করতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করা।
নারী দিবস পালনের পটভূমি এবং এ দিবসের তাৎপর্য
উপর্যুক্ত বিষয়গুলির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের লক্ষে প্রতি বছর নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বারের মতো পালিত হয়েছিল (যদিও বর্তমানে ৮ মার্চ এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে)। প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দশ মিলিয়ন নারী ও পুরুষ নারীদের অধিকারের পক্ষে সমাবেশ করেছিলেন।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যালিস্ট পার্টি দ্বারা ১৯০৯ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি আমেরিকার জাতীয় মহিলা দিবস পালনের ঘোষণার পর থেকে মূলত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি এসেছিলো। এ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে ১৯১১ সালে প্রথম নারী দিবস পালন করা হয়।
১৯১০ সালে সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল পার্টি ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে একটি বৈঠক করে এবং পার্টির প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি অনুমোদন করে। সে প্রেক্ষিতে পরের বছর প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় (যদিও একে প্রথমে মহিলা কর্মী দিবস বলা হতো)। সেই দিনটি ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ায় বিপুল জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছিল।
এ দিবস পালনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নিউইয়র্ক শহরের একটি কারখানার অগ্নিকান্ডে ১৪৬ জন নারী নিহত হয়। এবং এ ঘটনা নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ তাৎপর্য বহন করে। প্রথম দিকে নারী দিবসটি কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের সাথেই সম্পর্কযুক্ত ছিল।
১৯১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা/নারী দিবস পালন করে।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে, ৮ মার্চ নারীরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।
১৯১৭ সালের, ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমা ক্যালেন্ডারের সাথে সঙ্গতি রেখে রাশিয়ান মহিলারা একটি ধর্মঘটের আয়োজন করেছিল। অক্টোবর বিপ্লবের পরে, বলশেভিক আলেকজান্দ্রা কলোন্টাই এবং ভ্লাদিমির লেনিন এ দিনটিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারী ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করে।
সেই থেকে পূর্ব ইউরোপ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে এ দিনটি ছুটির দিন হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল। এবং ধীরে ধীরে, দিনটি সত্যিকারের আন্তর্জাতিক উদযাপনের দিবসে পরিণত হয়েছিল।
১৯৪৯ সালের ১ লা অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পরে, স্টেট কাউন্সিল ২৩ শে ডিসেম্বর ঘোষণা করেছিল যে ৮ মার্চকে চীনের মহিলাদের ছুটি দেওয়ার পরে সরকারী ছুটি হবে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে আন্তর্জাতিক নারী বছর হিসেবে উৎযাপন করে। এবং ১৯৭৭ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, সদস্য দেশগুলিকে ৮ ই মার্চ কে জাতিসংঘের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তির জন্য ঘোষণা করার আহবান জানিয়েছিল।
তবে, ১৯১৪ সালের ৮ মার্চ জার্মানিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সম্ভবত সেই দিনটি রবিবার ছিল এবং তখন থেকে সব দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়। জার্মানিতে ১৯১৪ সালের এই দিবসটি নারীদের ভোটাধিকারের জন্যও উৎসর্গ করা হয়।
উপরের প্রতিটা ঘটনাই নারীদের অধিকার আদায়ের সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বের প্রতিটি দেশের নারীরা কোন না কোন সময়ে রাস্তায় নেমেছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। এবং তারা বেশ কিছুটা হলেও সফল হয়েছে এটা বলাই যায়।
তথ্যসূত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/International_Women%27s_Day
https://www.un.org/en/events/womensday/history.shtml
https://www.internationalwomensday.com/About